খতিয়ানের Working ভলিউম কী, কোথায় পাওয়া যায় এবং কীভাবে সাধারণ মানুষ এই কাজ করতে পারে – বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড
📌 ভূমিকা
বাংলাদেশে জমি নিয়ে মালিকানা বিরোধ, নামজারি বা দলিল সংক্রান্ত সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ হলো রেকর্ড বা খতিয়ান নিয়ে অস্পষ্টতা। জমির খতিয়ান মূলত সরকারি একটি অফিসিয়াল দলিল যা মালিকানা, পরিমাণ ও শ্রেণিবিন্যাস নিশ্চিত করে। কিন্তু অনেকেই জানেন না—এই খতিয়ানের ওয়ার্কিং ভলিউম (Working Volume) আসলে কী এবং কোথায় এটি পাওয়া যায়।
সাধারণ মানুষের জন্য এই রেকর্ড বোঝা ও প্রয়োজনের সময় সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি জমির মালিকানা নিশ্চিত করা, নামজারি করা, দলিল নিবন্ধন, রাজস্ব পরিশোধসহ বহু ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

📝 ওয়ার্কিং ভলিউমের সংজ্ঞা ও গুরুত্ব
ওয়ার্কিং ভলিউম হলো খতিয়ানের একটি সক্রিয় রেকর্ড খাতা যেখানে জমির মালিকানা বা রেকর্ডে যেকোনো পরিবর্তন প্রথমে লিপিবদ্ধ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ—আপনি যদি নতুন করে কোনো জমি ক্রয় করেন বা আপনার পৈতৃক জমির ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়, তাহলে সেটি সরাসরি চূড়ান্ত খতিয়ানে না গিয়ে প্রথমে ওয়ার্কিং ভলিউমে যোগ হয়। পরে যাচাই-বাছাই শেষে তা চূড়ান্ত রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়।
⚖️ মূল ভূমিকা:
- নতুন নামজারি আবেদন নথিভুক্ত করা।
- জমির মালিকানা হস্তান্তর বা বিভাজন রেকর্ড করা।
- আদালতের আদেশ বা রায় অনুযায়ী রেকর্ড আপডেট করা।
- রাজস্ব আদায়ের জন্য রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার।
👉 সহজভাবে বললে, ওয়ার্কিং ভলিউম হলো জমির রেকর্ডের খসড়া বই, যেখানে সব আপডেট জমা হয় চূড়ান্ত করার আগে।
🏢 কোথায় ওয়ার্কিং ভলিউম পাওয়া যায়
সাধারণ মানুষ ওয়ার্কিং ভলিউমে প্রবেশাধিকার পেতে পারে ভূমি অফিস ও উপজেলা ভূমি রেকর্ড অফিসের মাধ্যমে। নিচে ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো—
1. 🏘️ ইউনিয়ন ভূমি অফিস (Union Land Office)
- এটি প্রাথমিক পর্যায় যেখানে জমির স্থানীয় রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়।
- প্রাথমিক তথ্য যাচাই ও জমির মৌজা সম্পর্কিত তথ্য এখানে থাকে।
- অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক ওয়ার্কিং ভলিউমের কপি এখান থেকেই দেখা যায়।
2. 🏤 উপজেলা ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অফিস (AC Land Office)
- মূলত এখানে ওয়ার্কিং ভলিউম সংরক্ষিত থাকে।
- জমির খতিয়ান সংশোধন, হালনাগাদ ও নামজারি এখানেই সম্পন্ন হয়।
- সাধারণ মানুষ নির্ধারিত ফি দিয়ে ওয়ার্কিং ভলিউমের তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
3. 🏛️ জেলা রেকর্ড রুম (Record Room / Collectorate)
- পুরনো ও বড় আকারের জমির রেকর্ড এখানে থাকে।
- আদালতের রায় বা বড় ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত পরিবর্তনগুলোও এই পর্যায়ে সংরক্ষিত হয়।
4. 💻 অনলাইন ভূমি রেকর্ড পোর্টাল (www.land.gov.bd)
- বর্তমানে অনেক উপজেলায় ওয়ার্কিং ভলিউমের তথ্য ডিজিটাল ডাটাবেজে আপলোড করা হচ্ছে।
- নাগরিকরা অনলাইনে খতিয়ানের তথ্য অনুসন্ধান করতে পারেন।
- এটি ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ ডিজিটাল হওয়ার পথে।
👨💼 কীভাবে সাধারণ মানুষ ওয়ার্কিং ভলিউমের তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার করতে পারে
নিচে ধাপে ধাপে একটি প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো—
ধাপ ১: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করুন
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- দলিল বা মালিকানা সংক্রান্ত প্রমাণপত্র
- মৌজা ও খতিয়ান নম্বর
- আবেদনপত্র (ভূমি অফিসে পাওয়া যায়)
ধাপ ২: স্থানীয় ভূমি অফিসে আবেদন করুন
- আবেদনপত্রে জমির মৌজা, দাগ নম্বর ও মালিকানার তথ্য উল্লেখ করে জমা দিন।
- নির্ধারিত সরকারি ফি পরিশোধ করুন।
- একটি রিসিভ কপি বা টোকেন সংগ্রহ করুন।
ধাপ ৩: রেকর্ড রুম বা রেকর্ড অফিসে যাচাই
- অফিসে আবেদন যাচাই শেষে কর্মকর্তারা ওয়ার্কিং ভলিউমে আপনার জমির রেকর্ড খুঁজে বের করবেন।
- প্রয়োজনে যাচাইকৃত কপি আপনাকে প্রদান করা হবে।
ধাপ ৪: ওয়ার্কিং ভলিউমের তথ্য ব্যবহার করুন
- দলিল নিবন্ধনের সময় মালিকানা প্রমাণে ব্যবহার করুন।
- নামজারি প্রক্রিয়ায় সহায়ক হিসেবে জমা দিন।
- আদালতের কোনো বিরোধ থাকলে ওয়ার্কিং ভলিউম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হয়।
⚖️ আইনি ভিত্তি ও প্রাসঙ্গিক আইন
বাংলাদেশে ওয়ার্কিং ভলিউম সংরক্ষণ ও ব্যবহারের জন্য নিচের আইনগুলো গুরুত্বপূর্ণ:
- State Acquisition and Tenancy Act, 1950
- ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ, 1984
- ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল
- ভূমি মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের নির্দেশিকা
এই আইন অনুযায়ী—
- ওয়ার্কিং ভলিউম একটি বৈধ প্রশাসনিক রেকর্ড।
- চূড়ান্ত খতিয়ানের আগে এটি প্রাথমিক প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
- প্রশাসন বাধ্য যে নাগরিকের আবেদনে এই তথ্য সরবরাহ করবে (যদি আবেদন সঠিক হয়)।
🚜 ওয়ার্কিং ভলিউমের বাস্তব ব্যবহারিক ক্ষেত্র
| ব্যবহারিক ক্ষেত্র | উদাহরণ | ওয়ার্কিং ভলিউমের ভূমিকা |
|---|---|---|
| দলিল নিবন্ধন | জমি বিক্রয় | মালিকানা যাচাই ও প্রমাণ |
| নামজারি | নতুন মালিক যোগ | পরিবর্তনের তথ্য রেকর্ড |
| আদালতের মামলা | জমি বিরোধ | প্রাথমিক প্রমাণপত্র |
| রাজস্ব আদায় | খাজনা নির্ধারণ | হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ |
⚠️ সাধারণ মানুষের জন্য সতর্কতা ও টিপস
- ব্রোকারের ফাঁদে না পড়া: অনেক ক্ষেত্রে দালালরা বেশি টাকা নিয়ে ভুয়া কপি দেয়। তাই সরাসরি ভূমি অফিসে যোগাযোগ করুন।
- অনলাইনে যাচাই করুন: www.land.gov.bd বা জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে তথ্য যাচাই করুন।
- সব নথির ফটোকপি রাখুন: ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা এড়াতে প্রতিটি ধাপের কপি সংরক্ষণ করুন।
- দ্রুত নামজারি করুন: দলিল করার পর যত দ্রুত সম্ভব ওয়ার্কিং ভলিউমে মালিকানা পরিবর্তন করান।
🌐 ডিজিটাল রূপান্তর ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে ভূমি খাতকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ নিয়েছে। “ডিজিটাল ওয়ার্কিং ভলিউম” চালুর ফলে—
- সাধারণ মানুষ ঘরে বসে অনলাইনে রেকর্ড দেখতে পারবেন।
- নামজারি ও দলিল সংক্রান্ত সময় কমে যাবে।
- দুর্নীতি কমে যাবে এবং স্বচ্ছতা বাড়বে।
👉 ভবিষ্যতে প্রতিটি জমির জন্য একটি ইউনিক ডিজিটাল আইডি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
🏁 উপসংহার
খতিয়ানের ওয়ার্কিং ভলিউম বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি কেবল মালিকানা রেকর্ড সংরক্ষণই নয়, বরং নামজারি, দলিল, রাজস্ব আদায় এবং আদালতের বিরোধ নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সাধারণ মানুষ চাইলে খুব সহজে স্থানীয় ভূমি অফিস বা অনলাইনের মাধ্যমে এই রেকর্ড দেখতে ও সংগ্রহ করতে পারেন। তবে এজন্য সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ ও সচেতন থাকা জরুরি।
একটি সঠিক ওয়ার্কিং ভলিউমের কপি আপনাকে জমি সংক্রান্ত ভবিষ্যৎ বিরোধ থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই আজই নিজের জমির রেকর্ড যাচাই করুন—
👉 ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যান
👉 AC Land অফিসে আবেদন করুন
👉 অনলাইনে land.gov.bd ঘুরে দেখুন।
📚 তথ্যসূত্র:
- ভূমি মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
- State Acquisition and Tenancy Act, 1950
- ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ, 1984
- ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল
- www.land.gov.bd
📞 লেখক: অ্যাডভোকেট নাজমুল আলম অপু
📍 বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (আইনজীবী)
☎️ 01715990741, 01680191991
খতিয়ানের ওয়ার্কিং ভলিউম কী, কোথায় পাওয়া যায় এবং কীভাবে সাধারণ মানুষ এই কাজ করতে পারে – বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড
লেখক: অ্যাডভোকেট নাজমুল আলম অপু
📌 ভূমিকা
বাংলাদেশে জমি নিয়ে মালিকানা বিরোধ, নামজারি বা দলিল সংক্রান্ত সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ হলো রেকর্ড বা খতিয়ান নিয়ে অস্পষ্টতা। জমির খতিয়ান মূলত সরকারি একটি অফিসিয়াল দলিল যা মালিকানা, পরিমাণ ও শ্রেণিবিন্যাস নিশ্চিত করে। কিন্তু অনেকেই জানেন না—এই খতিয়ানের ওয়ার্কিং ভলিউম (Working Volume) আসলে কী এবং কোথায় এটি পাওয়া যায়।
সাধারণ মানুষের জন্য এই রেকর্ড বোঝা ও প্রয়োজনের সময় সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি জমির মালিকানা নিশ্চিত করা, নামজারি করা, দলিল নিবন্ধন, রাজস্ব পরিশোধসহ বহু ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
📝 ওয়ার্কিং ভলিউমের সংজ্ঞা ও গুরুত্ব
ওয়ার্কিং ভলিউম হলো খতিয়ানের একটি সক্রিয় রেকর্ড খাতা যেখানে জমির মালিকানা বা রেকর্ডে যেকোনো পরিবর্তন প্রথমে লিপিবদ্ধ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ—আপনি যদি নতুন করে কোনো জমি ক্রয় করেন বা আপনার পৈতৃক জমির ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়, তাহলে সেটি সরাসরি চূড়ান্ত খতিয়ানে না গিয়ে প্রথমে ওয়ার্কিং ভলিউমে যোগ হয়। পরে যাচাই-বাছাই শেষে তা চূড়ান্ত রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়।
⚖️ মূল ভূমিকা:
- নতুন নামজারি আবেদন নথিভুক্ত করা।
- জমির মালিকানা হস্তান্তর বা বিভাজন রেকর্ড করা।
- আদালতের আদেশ বা রায় অনুযায়ী রেকর্ড আপডেট করা।
- রাজস্ব আদায়ের জন্য রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার।
👉 সহজভাবে বললে, ওয়ার্কিং ভলিউম হলো জমির রেকর্ডের খসড়া বই, যেখানে সব আপডেট জমা হয় চূড়ান্ত করার আগে।
🏢 কোথায় ওয়ার্কিং ভলিউম পাওয়া যায়
সাধারণ মানুষ ওয়ার্কিং ভলিউমে প্রবেশাধিকার পেতে পারে ভূমি অফিস ও উপজেলা ভূমি রেকর্ড অফিসের মাধ্যমে। নিচে ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো—
1. 🏘️ ইউনিয়ন ভূমি অফিস (Union Land Office)
- এটি প্রাথমিক পর্যায় যেখানে জমির স্থানীয় রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়।
- প্রাথমিক তথ্য যাচাই ও জমির মৌজা সম্পর্কিত তথ্য এখানে থাকে।
- অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক ওয়ার্কিং ভলিউমের কপি এখান থেকেই দেখা যায়।
2. 🏤 উপজেলা ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অফিস (AC Land Office)
- মূলত এখানে ওয়ার্কিং ভলিউম সংরক্ষিত থাকে।
- জমির খতিয়ান সংশোধন, হালনাগাদ ও নামজারি এখানেই সম্পন্ন হয়।
- সাধারণ মানুষ নির্ধারিত ফি দিয়ে ওয়ার্কিং ভলিউমের তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
3. 🏛️ জেলা রেকর্ড রুম (Record Room / Collectorate)
- পুরনো ও বড় আকারের জমির রেকর্ড এখানে থাকে।
- আদালতের রায় বা বড় ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত পরিবর্তনগুলোও এই পর্যায়ে সংরক্ষিত হয়।
4. 💻 অনলাইন ভূমি রেকর্ড পোর্টাল (www.land.gov.bd)
- বর্তমানে অনেক উপজেলায় ওয়ার্কিং ভলিউমের তথ্য ডিজিটাল ডাটাবেজে আপলোড করা হচ্ছে।
- নাগরিকরা অনলাইনে খতিয়ানের তথ্য অনুসন্ধান করতে পারেন।
- এটি ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ ডিজিটাল হওয়ার পথে।
👨💼 কীভাবে সাধারণ মানুষ ওয়ার্কিং ভলিউমের তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার করতে পারে
নিচে ধাপে ধাপে একটি প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো—
ধাপ ১: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করুন
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- দলিল বা মালিকানা সংক্রান্ত প্রমাণপত্র
- মৌজা ও খতিয়ান নম্বর
- আবেদনপত্র (ভূমি অফিসে পাওয়া যায়)
ধাপ ২: স্থানীয় ভূমি অফিসে আবেদন করুন
- আবেদনপত্রে জমির মৌজা, দাগ নম্বর ও মালিকানার তথ্য উল্লেখ করে জমা দিন।
- নির্ধারিত সরকারি ফি পরিশোধ করুন।
- একটি রিসিভ কপি বা টোকেন সংগ্রহ করুন।
ধাপ ৩: রেকর্ড রুম বা রেকর্ড অফিসে যাচাই
- অফিসে আবেদন যাচাই শেষে কর্মকর্তারা ওয়ার্কিং ভলিউমে আপনার জমির রেকর্ড খুঁজে বের করবেন।
- প্রয়োজনে যাচাইকৃত কপি আপনাকে প্রদান করা হবে।
ধাপ ৪: ওয়ার্কিং ভলিউমের তথ্য ব্যবহার করুন
- দলিল নিবন্ধনের সময় মালিকানা প্রমাণে ব্যবহার করুন।
- নামজারি প্রক্রিয়ায় সহায়ক হিসেবে জমা দিন।
- আদালতের কোনো বিরোধ থাকলে ওয়ার্কিং ভলিউম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হয়।
⚖️ আইনি ভিত্তি ও প্রাসঙ্গিক আইন
বাংলাদেশে ওয়ার্কিং ভলিউম সংরক্ষণ ও ব্যবহারের জন্য নিচের আইনগুলো গুরুত্বপূর্ণ:
- State Acquisition and Tenancy Act, 1950
- ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ, 1984
- ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল
- ভূমি মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের নির্দেশিকা
এই আইন অনুযায়ী—
- ওয়ার্কিং ভলিউম একটি বৈধ প্রশাসনিক রেকর্ড।
- চূড়ান্ত খতিয়ানের আগে এটি প্রাথমিক প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
- প্রশাসন বাধ্য যে নাগরিকের আবেদনে এই তথ্য সরবরাহ করবে (যদি আবেদন সঠিক হয়)।
🚜 ওয়ার্কিং ভলিউমের বাস্তব ব্যবহারিক ক্ষেত্র
| ব্যবহারিক ক্ষেত্র | উদাহরণ | ওয়ার্কিং ভলিউমের ভূমিকা |
|---|---|---|
| দলিল নিবন্ধন | জমি বিক্রয় | মালিকানা যাচাই ও প্রমাণ |
| নামজারি | নতুন মালিক যোগ | পরিবর্তনের তথ্য রেকর্ড |
| আদালতের মামলা | জমি বিরোধ | প্রাথমিক প্রমাণপত্র |
| রাজস্ব আদায় | খাজনা নির্ধারণ | হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ |
⚠️ সাধারণ মানুষের জন্য সতর্কতা ও টিপস
- ব্রোকারের ফাঁদে না পড়া: অনেক ক্ষেত্রে দালালরা বেশি টাকা নিয়ে ভুয়া কপি দেয়। তাই সরাসরি ভূমি অফিসে যোগাযোগ করুন।
- অনলাইনে যাচাই করুন: www.land.gov.bd বা জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে তথ্য যাচাই করুন।
- সব নথির ফটোকপি রাখুন: ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা এড়াতে প্রতিটি ধাপের কপি সংরক্ষণ করুন।
- দ্রুত নামজারি করুন: দলিল করার পর যত দ্রুত সম্ভব ওয়ার্কিং ভলিউমে মালিকানা পরিবর্তন করান।
🌐 ডিজিটাল রূপান্তর ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে ভূমি খাতকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ নিয়েছে। “ডিজিটাল ওয়ার্কিং ভলিউম” চালুর ফলে—
- সাধারণ মানুষ ঘরে বসে অনলাইনে রেকর্ড দেখতে পারবেন।
- নামজারি ও দলিল সংক্রান্ত সময় কমে যাবে।
- দুর্নীতি কমে যাবে এবং স্বচ্ছতা বাড়বে।
👉 ভবিষ্যতে প্রতিটি জমির জন্য একটি ইউনিক ডিজিটাল আইডি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
🏁 উপসংহার
খতিয়ানের ওয়ার্কিং ভলিউম বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি কেবল মালিকানা রেকর্ড সংরক্ষণই নয়, বরং নামজারি, দলিল, রাজস্ব আদায় এবং আদালতের বিরোধ নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সাধারণ মানুষ চাইলে খুব সহজে স্থানীয় ভূমি অফিস বা অনলাইনের মাধ্যমে এই রেকর্ড দেখতে ও সংগ্রহ করতে পারেন। তবে এজন্য সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ ও সচেতন থাকা জরুরি।
একটি সঠিক ওয়ার্কিং ভলিউমের কপি আপনাকে জমি সংক্রান্ত ভবিষ্যৎ বিরোধ থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই আজই নিজের জমির রেকর্ড যাচাই করুন—
👉 ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যান
👉 AC Land অফিসে আবেদন করুন
👉 অনলাইনে land.gov.bd ঘুরে দেখুন।
📚 তথ্যসূত্র:
- ভূমি মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
- State Acquisition and Tenancy Act, 1950
- ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ, 1984
- ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল
- www.land.gov.bd
📞 লেখক: অ্যাডভোকেট নাজমুল আলম অপু
📍 বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (আইনজীবী)
☎️ 01715990741, 01680191991